وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُو الدَّارَ وَالْاِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ اِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُوْنَ فِيْ صُدُوْرِهِمْ حَاجَةً مِّمَّآ اُوْتُوْا وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰٓى اَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۗوَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِهٖ فَاُولٰۤىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَۚ ( الحشر: ٩ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
(আর এ সম্পদ তাদের জন্যও) যারা মুহাজিরদের আসার আগে থেকেই (মাদীনাহ) নগরীর বাসিন্দা ছিল আর ঈমান গ্রহণ করেছে। তারা তাদেরকে ভালবাসে যারা তাদের কাছে হিজরাত করে এসেছে। মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা পাওয়ার জন্য তারা নিজেদের অন্তরে কোন কামনা রাখে না, আর তাদেরকে (অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে) নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয়- নিজেরা যতই অভাবগ্রস্ত হোক না কেন। বস্তুত; যাদেরকে হৃদয়ের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই সফলকাম।
English Sahih:
And [also for] those who were settled in the Home [i.e.,al-Madinah] and [adopted] the faith before them. They love those who emigrated to them and find not any want in their breasts of what they [i.e., the emigrants] were given but give [them] preference over themselves, even though they are in privation. And whoever is protected from the stinginess of his soul – it is those who will be the successful.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আর তাদের (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরী (মদীনা)তে বসবাস করেছে[১] ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা মুহাজিরদেরকে ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেওয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না,[২] বরং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা (তাদেরকে) নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়।[৩] আর যাদেরকে নিজ আত্মার কার্পণ্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। [৪]
[১] এ থেকে আনসারী সাহাবাদেরকে বুঝানো হয়েছে। যাঁরা মুহাজির সাহাবাদের মদীনা আসার পূর্ব থেকেই মদীনার বাসিন্দা ছিলেন এবং মুহাজিরদের হিজরত করে মদীনা আসার পূর্বেই তাঁদের অন্তরে ঈমান প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তবে এর অর্থ এই নয় যে, মুহাজির সাহাবাদের ঈমান আনার পূর্বেই আনসারী সাহাবাগণ ঈমান এনেছিলেন। কেননা, তাঁদের অধিকাংশই মুহাজির সাহাবাদের ঈমান আনার পর ঈমান এনেছেন। অর্থাৎ, مِنْ قَبْلِهِمْ (তাদের পূর্বে)এর অর্থ, مِنْ قَبْلِ هِجْرَتِهِمْ (তাঁদের হিজরত করার পূর্বে)। আর الدَارٌ বলতে دَارُ الْهِجْرَةِ অর্থাৎ, মদীনাকে বুঝানো হয়েছে।
[২] অর্থাৎ, মুহাজির সাহাবীদেরকে আল্লাহর রসূল (সাঃ) যা কিছু দিতেন তাতে তাঁরা না হিংসা করতেন, আর না মনে কোন প্রকার সংকীর্ণতা অনুভব করতেন। যেমন, 'মালে ফাই' পাওয়ার প্রথম অধিকারী তাঁদেরকেই গণ্য করা হয়। এতে আনসার সাহাবীগণ কিছুই মনে করেননি।
[৩] অর্থাৎ, নিজেদের তুলনায় মুহাজিরদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতেন। নিজেরা ক্ষুধার্ত থাকতেন, কিন্তু মুহাজিরদেরকে খাওয়াতেন। যেমন, হাদীসে একটা ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, একদা নবী (সাঃ)-এর নিকট একজন মেহমান এল। কিন্তু রসূল (সাঃ)-এর ঘরে কিছুই ছিল না। সুতরাং একজন আনসারী সাহাবী তাঁকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। ঘরে গিয়ে স্ত্রীকে জানালে স্ত্রী বললেন, 'ঘরে তো কেবল ছেলেদের খাবার মত সামান্য কিছু আছে।' পরে উভয়ে পরামর্শ করলেন যে, ছেলেদেরকে আজ (ভুলিয়ে-ভালিয়ে) ক্ষুধার্ত রেখেই ঘুম পাড়িয়ে দাও এবং আমরা নিজেরাও কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে যাব। তবে মেহমানকে খাওয়ানোর সময় (ছল করে) বাতিটা নিভিয়ে দেবে, যাতে সে আমাদের ব্যাপারে জানতে না পারে যে, আমরা তার সাথে খাবার খাচ্ছি না। সকালে যখন এই সাহাবী রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন যে, মহান আল্লাহ তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে এই আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। ﴿وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ﴾ (সহীহ বুখারী, সূরা হাশরের তফসীর) তাঁদের ত্যাগের একটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত এও যে, একজন আনসারী সাহাবীর নিকট দু'জন স্ত্রী ছিল। তিনি তাঁর মুহাজির ভাইকে প্রস্তাব দিলেন যে, আমি তোমার জন্য আমার একজন স্ত্রীকে তালাক দেব। ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর তুমি তাকে বিবাহ করে নেবে! (বুখারী, বিবাহ অধ্যায়)
[৪] হাদীসে আছে যে, কৃপণতা হতে দূরে থাক। কারণ, এই কৃপণতাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই কৃপণতাই তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করতে এবং হারামকে হালাল করে নিতে প্ররোচিত করেছিল। (মুসলিমঃ নেকী অধ্যায়, পরিচ্ছেদঃ অত্যাচার করা হারাম)