مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًاۗ اِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ ۗوَالَّذِيْنَ يَمْكُرُوْنَ السَّيِّاٰتِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ ۗوَمَكْرُ اُولٰۤىِٕكَ هُوَ يَبُوْرُ ( فاطر: ١٠ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
কেউ সম্মান-সুখ্যাতি চাইলে (আল্লাহকে উপেক্ষা করে তা লাভ করা যাবে না), সে জেনে নিক যাবতীয় সম্মান-সুখ্যাতির অধিকারী হলেন আল্লাহ। তাঁরই দিকে উত্থিত হয় পবিত্র কথাগুলো আর সৎকাজ সেগুলোকে উচ্চে তুলে ধরে। যারা মন্দ কাজের চক্রান্ত করে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তাদের চক্রান্ত নিষ্ফল হবে।
English Sahih:
Whoever desires honor [through power] – then to Allah belongs all honor. To Him ascends good speech, and righteous work raises it. But they who plot evil deeds will have a severe punishment, and the plotting of those – it will perish.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
কেউ ক্ষমতা (ইজ্জত-সম্মান) চাইলে (সে জেনে রাখুক) সকল ক্ষমতা (ইজ্জত-সম্মান) তো আল্লাহরই।[১] সৎবাক্য তাঁর দিকে আরোহণ করে[২] এবং সৎকর্ম তিনি তুলে (গ্রহণ করে) নেন।[৩] আর যারা মন্দ কাজের ফন্দি আঁটে[৪] তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তাদের ফন্দি ব্যর্থ হবেই। [৫]
[১] অর্থাৎ, যে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত হতে চায়, সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করে; আল্লাহর আনুগত্যেই তার এই উদ্দেশ্য পূরণ হবে। কারণ দুনিয়া ও আখেরাতের একমাত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ, সকল সম্মান তাঁরই নিকটে, তিনি যাকে সম্মান দেবেন সেই সম্মানিত হবে, তিনি যাকে অপদস্থ করবেন তাকে পৃথিবীর কোন শক্তি সম্মান দিতে পারবে না। তিনি অন্য স্থানে বলেছেন, (الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا) অর্থাৎ, যারা বিশ্বাসীদের পরিবর্তে অবিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। তারা কি তাদের নিকট সম্মান অনুসন্ধান করে? অথচ সমস্ত সম্মান তো আল্লাহরই। (সূরা নিসা ৪;১৩৯ আয়াত)
[২] اَلْكَلِمُ - كَلِمَةٌ এর বহুবচন। পবিত্র কালেমাসমূহের অর্থ হলঃ আল্লাহর তাসবীহ ও তাহমীদ (পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা), কুরআন তেলাঅত, ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ। 'আরোহণ করে' (উপরে চড়ে বা উঠে) এর অর্থ হলঃ কবুল বা গ্রহণ করা। অথবা তা নিয়ে ফিরিশতাদের আকাশে উঠে যাওয়া যাতে আল্লাহ তাআলা তার সওয়াব প্রদান করেন।
[৩] يَرْفَعُهُ ক্রিয়ার কর্তা কে? অনেকে বলেন, الكلم الطيب অর্থাৎ, সৎকর্ম সৎবাক্যকে (আল্লাহর দিকে) উঠিয়ে থাকে। আর তার মানে, শুধু মুখে আল্লাহর যিকর (তাসবীহ ও তাহমীদে) কোন কাজ হবে না; যতক্ষণ না তার সাথে সৎকর্ম অর্থাৎ আহ্কাম ও ফরয আমল আদায় করা হবে। অনেকে বলেন, يرفعه ক্রিয়ার কর্তা মহান আল্লাহ। উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলা সৎকর্মকে সৎবাক্যের উপর প্রধান্য দেন। কারণ সৎকর্ম দ্বারাই এই কথা প্রমাণ হয় যে, সৎবাক্য (তাসবীহ, তাহমীদ ইত্যাদি) আবৃত্তিকারী প্রকৃতপক্ষে তাতে আন্তরিক ও একনিষ্ঠ। (ফাতহুল ক্বাদীর) ঠিক যেন আল্লাহর নিকট আমল ছাড়া কেবল মুখের কথার কোন মূল্য নেই।
[৪] গোপনভাবে কারোর ক্ষতি সাধন করার চেষ্টাকে مكر (চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র বা ফন্দি অাঁটা) বলে। কুফর ও শিরকের কাজ করাও এক প্রকার চক্রান্তের কাজ। যেহেতু তাতে আল্লাহর পথের ক্ষতি সাধন করা হয়। মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে হত্যা ইত্যাদির যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাকেও চক্রান্ত বলা হয়েছে। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন কাজ করাকেও চক্রান্ত বলা যায়। এখানে উক্ত শব্দটি সাধারণ অর্থে ব্যবহার হয়েছে; অর্থাৎ এখানে সকল প্রকার চক্রান্ত ও ফন্দির নিন্দা করা হয়েছে।
[৫] অর্থাৎ, তাদের চক্রান্তও ব্যর্থ হবে এবং তার শাস্তিও তাদেরকেই ভোগ করতে হবে যে চক্রান্ত করবে। যেমন বলেছেন, (وَلا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلا بِأَهْلِه) অর্থাৎ, কূট ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্রকারীদেরই পরিবেষ্টন করে। (সূরা ফাত্বির ৩৫;৪৩ আয়াত)