يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ اِذْ جَاۤءَتْكُمْ جُنُوْدٌ فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيْحًا وَّجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا ۗوَكَانَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرًاۚ ( الأحزاب: ٩ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
হে মু’মিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর যখন সৈন্যবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম ঝড়ো হাওয়া এবং এক (ফেরেশতারূপী) সৈন্যবাহিনী যা তোমরা দেখনি। তোমরা যা কর আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।
English Sahih:
O you who have believed, remember the favor of Allah upon you when armies came to [attack] you and We sent upon them a wind and armies [of angels] you did not see. And ever is Allah, of what you do, Seeing.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি ওদের বিরুদ্ধে ঝড় এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যা তোমরা দেখতে পাওনি।[১] আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার দ্রষ্টা।
[১] উক্ত আয়াতসমূহে পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত আহযাব যুদ্ধের কিছু বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এই যুদ্ধকে 'আহযাব' এই জন্য বলা হয় যে, এই সময় ইসলামের সকল শত্রুবাহিনী একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ঘাঁটি 'মদীনার' উপর আক্রমণ করেছিল। 'আহযাব' 'হিযব' শব্দের বহুবচন, যার অর্থ বাহিনী বা দল। একে খন্দকের যুদ্ধও বলা হয়, কারণ মুসলিমগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মদীনার একপাশে খাল খনন করেন। যাতে শত্রুবাহিনী মদীনা শহরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। (খন্দক মানে খাল বা পরিখা।) উক্ত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এইরূপ যে, ইয়াহুদী গোত্র বানু নায্বীর; যাদেরকে বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ফলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তারা খায়বারে গিয়ে বসবাস শুরু করে। তারা মক্কার কাফেরদেরকে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার জন্য তৈরী করল। অনুরূপ গাত্বফান ইত্যাদি গোত্র নাজ্দের গোত্রগুলোকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করল। সুতরাং ইয়াহুদীরা অনায়াসে ইসলাম ও মুসলিমদের সকল শত্রুদেরকে একত্রিত করে মদীনার উপর আক্রমণ করতে সফল হল। মক্কার মুশরিকদের কমান্ডার ছিল আবু সুফিয়ান। সে উহুদ পর্বতের আশেপাশে শিবির স্থাপন করে প্রায় পুরো মদীনাকে পরিবেষ্টন করে নিল। তাদের সম্মিলিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। আর মুসলিমগণ ছিলেন মাত্র তিন হাজার। এ ছাড়াও মদীনার দক্ষিণ দিকে ইয়াহুদীদের তৃতীয় গোত্র বানু কুরাইযা বাস করত; যাদের সাথে সেই সময় পর্যন্ত মুসলিমদের চুক্তি ছিল এবং তারা মুসলিমদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু বানী নাযবীরের ইয়াহুদী সর্দার হুয়াই বিন আখত্বাব মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ফুসলিয়ে নিজেদের সাথে করে নিল। এদিকে মুসলিমগণ সর্বদিক দিয়ে শত্রুবাহিনীর পরিবেষ্টনে পড়ে গেলেন। সেই সংকটাবস্থায় সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর পরামর্শে পরিখা খনন করা হল। যার ফলে শত্রু বাহিনী মদীনার ভিতর প্রবেশ করতে সক্ষম হল না; বরং মদীনার বাইরেই থাকতে বাধ্য হল। তারপরেও মুসলিমগণ সেই পরিবেষ্টন ও সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর আক্রমণের ভয়ে ভীত ছিলেন। প্রায় এক মাস যাবৎ এই পরিবেষ্টনে মুসলিমগণ কঠিন ভয় ও দুশ্চিন্তায় কালাতিপাত করেন। পরিশেষে মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে গায়বী সাহায্য করলেন। উক্ত আয়াতগুলিতে সেই কঠিন অবস্থা ও গায়বী সাহায্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম جنود থেকে উদ্দেশ্য হল কাফেরদের শত্রুবাহিনী যারা সম্মিলিত হয়ে এসেছিল। 'ঝড়' বলতে ঐ প্রবল হাওয়াকে বুঝানো হয়েছে, যা তুফানরূপে এসে তাদের তাঁবু উড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল, পশুর দল রশি ছিঁড়ে পালিয়েছিল, ডেগগুলি উল্টে গিয়েছিল এবং তারা সকলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এই ঝড় সম্পর্কে হাদীসে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, "আমাকে পুবালী হাওয়া দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে এবং আদ সম্প্রদায়কে পশ্চিমী হাওয়া দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।" (বুখারীঃ ইস্তিস্কা অধ্যায়) (وَجُنُوْدًا لَّمْ تَرَوْهَا) এর অর্থ হল ফিরিশতা; যারা মুসলিমদের সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। তাঁরা শত্রুবাহিনীর মনে এমন ভয় ও ত্রাস সঞ্চার করেন যে, তারা সেখান থেকে অবিলম্বে পালিয়ে যাওয়াকেই নিজেদের কল্যাণ মনে করেছিল।