ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ( الروم: ٤١ )
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।
English Sahih:
Corruption has appeared throughout the land and sea by [reason of] what the hands of people have earned so He [i.e., Allah] may let them taste part of [the consequence of] what they have done that perhaps they will return [to righteousness].
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; যাতে ওদের কোন কোন কর্মের শাস্তি ওদেরকে আস্বাদন করানো হয়। যাতে ওরা (সৎপথে) ফিরে আসে। [১]
[১] 'স্থল' বলতে মানুষের বাসভূমি এবং জল বলতে সমুদ্র, সামুদ্রিক পথ এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসের স্থান বুঝানো হয়েছে। 'ফাসাদ' (বিপর্যয়) বলতে ঐ সকল আপদ-বিপদকে বুঝানো হয়েছে, যার দ্বারা মনুষ্য-সমাজে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হয় এবং মানুষের শান্তিময় জীবন-যাত্রা ব্যাহত হয়। এই জন্য এর অর্থ গোনাহ ও পাপাচরণ করাও সঠিক। অর্থাৎ, মানুষ এক অপরের উপর অত্যাচার করছে, আল্লাহর সীমা লংঘন করছে এবং নৈতিকতার বিনাশ সাধন করছে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত সাধারণ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। অবশ্য 'ফাসাদ'-এর অর্থ আকাশ-পৃথিবীর ঐ সকল বিপর্যয় নেওয়াও সঠিক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ও সতর্কতা স্বরূপ প্রেরণ করা হয়। যেমন দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অনিরাপত্তা, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি। উদ্দেশ্য এই যে, যখন মানুষ আল্লাহর অবাধ্যতাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নেয়, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিফল স্বরূপ তাদের কর্মপ্রবণতা মন্দের দিকে ফিরে যায় এবং তার ফলে পৃথিবী নানা বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, সুখ-শান্তি বিলীন হয় এবং তার পরিবর্তে ভয়-ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, ছিন্তাই-ডাকাতি, লড়াই ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়ে। তার সাথে সাথে কখনো আকাশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন আপদ-বিপদ (প্রাকৃতিক দুর্যোগ)ও প্রেরিত হয়। আর তাতে উদ্দেশ্য এই থাকে যে, ঐ সর্বনাশী বিপর্যয় ও আপদ-বিপদ দেখে সম্ভবত মানুষ পাপকর্ম থেকে বিরত হবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে পুনরায় তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসবে। এর বিপরীত যে সমাজের রীতি-নীতি ও চাল-চলন আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যে সমাজে আল্লাহর 'হদ্দ' (দন্ডবিধি) কায়েম হয়, অত্যাচারের জায়গায় ন্যায়পরায়ণতা বিরাজ করে, সে সমাজে সুখ-শান্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মঙ্গল ও বরকত দেওয়া হয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, "পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার একটি 'হদ্দ' কায়েম করা সেখানকার মানুষের জন্য চল্লিশ দিনের বৃষ্টি থেকেও উত্তম।" (নাসাঈ, ইবনে মাজা) অনুরূপ একটি হাদীসে এসেছে, "যখন একটি পাপাচারী মারা যায়, তখন শুধু মানুষই নয়; বরং গ্রাম-শহর, গাছপালা এবং প্রাণীরাও পর্যন্ত শান্তিলাভ করে।" (বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক, মুসলিমঃ কিতাবুল জানাইয)