Skip to main content

يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْٓا اِذَا تَدَايَنْتُمْ بِدَيْنٍ اِلٰٓى اَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوْهُۗ وَلْيَكْتُبْ بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌۢ بِالْعَدْلِۖ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ اَنْ يَّكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللّٰهُ فَلْيَكْتُبْۚ وَلْيُمْلِلِ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللّٰهَ رَبَّهٗ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْـًٔاۗ فَاِنْ كَانَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيْهًا اَوْ ضَعِيْفًا اَوْ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يُّمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهٗ بِالْعَدْلِۗ وَاسْتَشْهِدُوْا شَهِيْدَيْنِ مِنْ رِّجَالِكُمْۚ فَاِنْ لَّمْ يَكُوْنَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَّامْرَاَتٰنِ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَۤاءِ اَنْ تَضِلَّ اِحْدٰىهُمَا فَتُذَكِّرَ اِحْدٰىهُمَا الْاُخْرٰىۗ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَۤاءُ اِذَا مَا دُعُوْا ۗ وَلَا تَسْـَٔمُوْٓا اَنْ تَكْتُبُوْهُ صَغِيْرًا اَوْ كَبِيْرًا اِلٰٓى اَجَلِهٖۗ ذٰلِكُمْ اَقْسَطُ عِنْدَ اللّٰهِ وَاَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَاَدْنٰىٓ اَلَّا تَرْتَابُوْٓا اِلَّآ اَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيْرُوْنَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَلَّا تَكْتُبُوْهَاۗ وَاَشْهِدُوْٓا اِذَا تَبَايَعْتُمْ ۖ وَلَا يُضَاۤرَّ كَاتِبٌ وَّلَا شَهِيْدٌ ەۗ وَاِنْ تَفْعَلُوْا فَاِنَّهٗ فُسُوْقٌۢ بِكُمْ ۗ وَاتَّقُوا اللّٰهَ ۗ وَيُعَلِّمُكُمُ اللّٰهُ ۗ وَاللّٰهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ  ( البقرة: ٢٨٢ )

O you
يَٰٓأَيُّهَا
হে
who
ٱلَّذِينَ
যারা
believe[d]!
ءَامَنُوٓا۟
ঈমান এনেছ
When
إِذَا
যখন
you contract with one another
تَدَايَنتُم
তোমরা পরস্পরে আদান-প্রদান কর
any debt
بِدَيْنٍ
ঋণের
for
إِلَىٰٓ
পর্যন্ত
a term
أَجَلٍ
মেয়াদ
fixed
مُّسَمًّى
নির্দিষ্ট
then write it
فَٱكْتُبُوهُۚ
তা তোমরা তখন লিখে রাখো
And let write
وَلْيَكْتُب
এবং যেন লেখে
between you
بَّيْنَكُمْ
তোমাদের মাঝে
a scribe
كَاتِبٌۢ
একজন লেখক
in justice
بِٱلْعَدْلِۚ
ন্যায্যভাবে
And not
وَلَا
এবং না
(should) refuse
يَأْبَ
অস্বীকার করবে
a scribe
كَاتِبٌ
কোনো লেখক
that
أَن
যে (না)
he writes
يَكْتُبَ
সে লিখবে
as
كَمَا
যেমন
(has) taught him
عَلَّمَهُ
শিখিয়েছেন তাকে
Allah
ٱللَّهُۚ
আল্লাহ
So let him write
فَلْيَكْتُبْ
অতএব সে যেন লেখে
and let dictate
وَلْيُمْلِلِ
এবং যেন সে লিখিয়ে নেয় (লেখ্য বিষয়)
the one
ٱلَّذِى
সেই (ব্যক্তি)
on whom
عَلَيْهِ
যার উপর (আছে)
(is) the right
ٱلْحَقُّ
অধিকার (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা)
and let him fear
وَلْيَتَّقِ
এবং সে ভয় করে যেন (লেখক)
Allah
ٱللَّهَ
আল্লাহকে (যিনি)
his Lord
رَبَّهُۥ
তার রব
and (let him) not
وَلَا
এবং না
diminish
يَبْخَسْ
কম করবে
from it
مِنْهُ
তা থেকে
anything
شَيْـًٔاۚ
কিছুই
Then if
فَإِن
অতঃপর যদি
is
كَانَ
হয়
the one
ٱلَّذِى
সে
on him
عَلَيْهِ
যার উপর
(is) the right
ٱلْحَقُّ
অধিকার (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা)
(of) limited understanding
سَفِيهًا
নির্বোধ
or
أَوْ
বা
weak
ضَعِيفًا
দুর্বল
or
أَوْ
বা
not
لَا
না
capable
يَسْتَطِيعُ
সে পারে
that
أَن
যে
(can) dictate
يُمِلَّ
সে লিখিয়ে নেবে
he
هُوَ
সে
then let dictate
فَلْيُمْلِلْ
তবে যেন লিখিয়ে নেয়
his guardian
وَلِيُّهُۥ
তার অভিভাবক
with justice
بِٱلْعَدْلِۚ
ন্যায্যভাবে
And call for evidence
وَٱسْتَشْهِدُوا۟
এবং তোমরা সাক্ষী রাখো
two witnesses
شَهِيدَيْنِ
দুজন সাক্ষী
among
مِن
মধ্য হতে
your men
رِّجَالِكُمْۖ
তোমাদের পুরুষদের
And if
فَإِن
অতঃপর যদি
not
لَّمْ
না
there are
يَكُونَا
থাকে
two men
رَجُلَيْنِ
দুজন পুরুষ
then one man
فَرَجُلٌ
তবে একজন পুরুষ
and two women
وَٱمْرَأَتَانِ
ও দুজন মহিলা
of whom
مِمَّن
(তাদের) হতে যাদের
you agree
تَرْضَوْنَ
তোমরা পছন্দ কর
of
مِنَ
মধ্য হতে
[the] witnesses
ٱلشُّهَدَآءِ
সাক্ষীদের
(so) that (if)
أَن
যে
[she] errs
تَضِلَّ
ভুল করলে
one of the two
إِحْدَىٰهُمَا
দুজনের একজন(মহিলাদের)
then will remind
فَتُذَكِّرَ
তখন স্মরণ করাবে
one of the two
إِحْدَىٰهُمَا
দুজনের একজন(মহিলা)
the other
ٱلْأُخْرَىٰۚ
অন্যজনকে
And not
وَلَا
এবং না
(should) refuse
يَأْبَ
অস্বীকার করবে
the witnesses
ٱلشُّهَدَآءُ
সাক্ষীরা
when
إِذَا
যখন
that
مَا
(কি)
they are called
دُعُوا۟ۚ
তাদের ডাকা হবে
And not
وَلَا
এবং না
(be) weary
تَسْـَٔمُوٓا۟
তোমরা বিরক্তিবোধ করবে
that
أَن
যে
you write it
تَكْتُبُوهُ
তা তোমরা লিখবে
small
صَغِيرًا
ছোট (ব্যাপার হোক)
or
أَوْ
বা
large
كَبِيرًا
বড় (হোক)
for
إِلَىٰٓ
পর্যন্ত
its term
أَجَلِهِۦۚ
তার মেয়াদ
That
ذَٰلِكُمْ
এটা
(is) more just
أَقْسَطُ
অধিকতর ন্যায়সঙ্গত
near
عِندَ
কাছে
Allah
ٱللَّهِ
আল্লাহর
and more upright
وَأَقْوَمُ
ও দৃঢ়তর
for evidence
لِلشَّهَٰدَةِ
সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য
and nearer
وَأَدْنَىٰٓ
ও অধিক নিকটবর্তী
that not
أَلَّا
যেন না
you (have) doubt
تَرْتَابُوٓا۟ۖ
তোমরা সন্দেহ কর
except
إِلَّآ
তবে
that
أَن
যে (সব)
be
تَكُونَ
হয়ে থাকে
a transaction
تِجَٰرَةً
ব্যবসা
present
حَاضِرَةً
নগদ
you carry out
تُدِيرُونَهَا
তা তোমরা পরস্পর পরিচালনা কর
among you
بَيْنَكُمْ
তোমাদের মাঝে
then not
فَلَيْسَ
নেই তবে
on you
عَلَيْكُمْ
তোমাদের উপর
any sin
جُنَاحٌ
কোনো পাপ
that not
أَلَّا
যদি না
you write it
تَكْتُبُوهَاۗ
তা তোমরা লিখে রাখ
And take witness
وَأَشْهِدُوٓا۟
এবং তোমরা সাক্ষী রাখো
when
إِذَا
যখন
you make commercial transaction
تَبَايَعْتُمْۚ
তোমরা বেচা কেনা কর
And not
وَلَا
এবং না
(should) be harmed
يُضَآرَّ
ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে
(the) scribe
كَاتِبٌ
লেখককে
and not
وَلَا
আর না
(the) witness
شَهِيدٌۚ
সাক্ষীকে
and if
وَإِن
এবং যদি
you do
تَفْعَلُوا۟
তোমরা কর
then indeed it
فَإِنَّهُۥ
তবে তা নিশ্চয়ই
(is) sinful conduct
فُسُوقٌۢ
অন্যায়
for you
بِكُمْۗ
তোমাদের জন্য
and fear
وَٱتَّقُوا۟
এবং তোমরা ভয় করো
Allah
ٱللَّهَۖ
আল্লাহকে
And teaches
وَيُعَلِّمُكُمُ
এবং তোমাদেরকে শিক্ষা দেন
Allah
ٱللَّهُۗ
আল্লাহ
And Allah
وَٱللَّهُ
এবং আল্লাহ
of every
بِكُلِّ
সম্পর্কে
thing
شَىْءٍ
সবকিছু
(is) All-Knower
عَلِيمٌ
খুব অবহিত

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধারে কারবার করবে, তখন তা লিখে রাখবে, তোমাদের মধ্যে যেন কোন একজন লেখক ন্যায্যভাবে লিখে দেয়, লেখক যেন লিখতে অস্বীকার না করে, যেরূপ আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন, কাজেই সে যেন লিখে এবং কর্জ-গ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয় এবং তার প্রতিপালক আল্লাহর ভয় রাখে এবং প্রাপ্য হতে যেন কোনও প্রকারের কাটছাঁট না করে। যদি কর্জ-গ্রহীতা স্বল্প-বুদ্ধি অথবা দুর্বল কিংবা লেখার বিষয়বস্তু বলতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক যেন লেখার বিষয়বস্তু ন্যায্যভাবে বলে দেয় এবং তোমাদের আপন পুরুষ লোকের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী রাখ, যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায়, তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রী লোক, যাদের সাক্ষ্য সম্পর্কে তোমরা রাজী আছ, এটা এজন্য যে, যদি একজন ভুলে যায় তবে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দেবে এবং যখন সাক্ষীগণকে ডাকা হবে, তখন যেন (সাক্ষ্য দিতে) অস্বীকার না করে। ছোট হোক বা বড় হোক তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদসহ লিখে রাখাকে তাচ্ছিল্যভরে উপেক্ষা করো না, এ লিখে রাখা আল্লাহর নিকট ইনসাফ বজায় রাখার জন্য দৃঢ়তর, সঠিক প্রমাণের জন্য সহজতর এবং তোমরা যাতে কোনও সন্দেহে পতিত না হও এর নিকটবর্তী। কিন্তু যদি কোন সওদা তোমরা পরস্পর নগদ নগদ সম্পাদন কর, তবে না লিখলেও তোমাদের কোন দোষ নেই। আর তোমরা যখন পরস্পর কেনাবেচা কর তখন সাক্ষী রেখ। কোনও লেখক ও সাক্ষীকে যেন কষ্ট দেয়া না হয় এবং যদি এরূপ কর, তাহলে তোমাদের গুনাহ হবে। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সুপরিজ্ঞাত।

English Sahih:

O you who have believed, when you contract a debt for a specified term, write it down. And let a scribe write [it] between you in justice. Let no scribe refuse to write as Allah has taught him. So let him write and let the one who has the obligation [i.e., the debtor] dictate. And let him fear Allah, his Lord, and not leave anything out of it. But if the one who has the obligation is of limited understanding or weak or unable to dictate himself, then let his guardian dictate in justice. And bring to witness two witnesses from among your men. And if there are not two men [available], then a man and two women from those whom you accept as witnesses – so that if one of them [i.e., the women] errs, then the other can remind her. And let not the witnesses refuse when they are called upon. And do not be [too] weary to write it, whether it is small or large, for its [specified] term. That is more just in the sight of Allah and stronger as evidence and more likely to prevent doubt between you, except when it is an immediate transaction which you conduct among yourselves. For [then] there is no blame upon you if you do not write it. And take witnesses when you conclude a contract. Let no scribe be harmed or any witness. For if you do so, indeed, it is [grave] disobedience in you. And fear Allah. And Allah teaches you. And Allah is Knowing of all things.

1 Tafsir Ahsanul Bayaan

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পরস্পর ঋণ দেওয়া-নেওয়া কর, তখন তা লিখে নাও।[১] আর তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায়ভাবে তা লিখে দেয় এবং আল্লাহ যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন --সেইরূপ লিখতে কোন লেখক যেন অস্বীকার না করে। অতএব তার লিখে দেওয়াই উচিত। আর ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দিয়ে লিখিয়ে নেয়[২] এবং সে যেন স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্র কম-বেশী না করে। অনন্তর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দুর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তাহলে তার অভিভাবক যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লেখায়। আর তোমাদের মধ্যে দু’জন পুরুষকে (এই আদান-প্রদানের) সাক্ষী কর। যদি দু’জন পুরুষ না পাও, তাহলে সাক্ষীদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর তাদের মধ্য হতে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী কর; [৩] যাতে মহিলাদ্বয়ের একজন ভুলে গেলে যেন অন্য জন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।[৪] আর যখন (সাক্ষ্য দিতে) ডাকা হয়, তখন যেন সাক্ষীরা অস্বীকার না করে। (ঋণ) ছোট হোক, বড় হোক, তোমরা মেয়াদসহ লিখতে কোনরূপ অলসতা করো না। এ লেখা আল্লাহর নিকট ন্যায্যতর ও সাক্ষ্য (প্রমাণের) জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার অধিক নিকটতর।[৫] কিন্তু তোমরা পরস্পরে ব্যবসায় যে নগদ আদান-প্রদান কর, তা না লিখলে কোন দোষ নেই। তোমরা যখন পরস্পর বেচা-কেনা কর, তখন সাক্ষী রাখ।[৬] আর কোন লেখক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং না কোন সাক্ষী।[৭] যদি তোমরা তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত কর, তাহলে তা হবে তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।[৮] আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞান\r\n

[১] যে সমাজে সূদী কার্যকলাপকে কঠোরভাবে নিষেধ করে সাদাকা-খয়রাত করার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে, সেই সমাজে ঋণ করার প্রয়োজন পড়ে বেশী। কারণ সূদ তো হারাম এবং সব মানুষ সাদাকা-খয়রাত করার সামর্থ্য রাখে না। তাছাড়া সব লোক সাদাকা নিতে পছন্দও করে না। সুতরাং স্বীয় প্রয়োজন পূরণ করার জন্য উপায় এখন ঋণ আদান-প্রদান করা। আর এই কারণেই ঋণ দেওয়া যে বড় ফযীলতের কাজ, সে কথা বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে ঋণ যেহেতু অতীব প্রয়োজনীয় জিনিস, তাই এর প্রতি গুরুত্ব না দিলে অথবা এ ব্যাপারে অলসতা করলে, তা কলহ-বিবাদের কারণও হতে পারে। তাই এই আয়াতে --যাকে 'আয়াতুদ দাইন' বলা হয় এবং যেটা কুরআনের মধ্যে সব থেকে লম্বা আয়াত -তাতে মহান আল্লাহ ঋণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেছেন। যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনটি কলহ-বিবাদের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই এ ব্যাপারে একটি নির্দেশ হল, মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নাও। দ্বিতীয় নির্দেশ, এটা লিখে নাও এবং তৃতীয় নির্দেশ হল, এর উপর দু'জন মুসলিম পুরুষকে অথবা একজন পুরুষ ও দু'জন মহিলাকে সাক্ষী বানিয়ে নাও।

[২] এ থেকে ঋণগ্রহীতাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং টাকার যেন সঠিক পরিমাণ লিখায়, কম করে যেন না লিখায়। এর পর বলা হচ্ছে, ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল শিশু কিংবা পাগল হয়, তাহলে তার অভিভাবকের উচিত ইনসাফের সাথে লিখিয়ে নেওয়া, যাতে ঋণদাতার কোন ক্ষতি না হয়।

[৩] অর্থাৎ, যাদের দ্বীনদারী ও ন্যায়-নিষ্ঠার ব্যাপারে তোমরা পূর্ণ আস্থাবান। কুরআনের এই আয়াত দ্বারা এ কথাও জানা গেল যে, দু'জন মহিলার সাক্ষী একজন পুরুষের সমান। অনুরূপ পুরুষ ছাড়াই কেবল একজন মহিলার সাক্ষী জায়েয নয়; কেবল সেই ব্যাপারগুলো ছাড়া যে ব্যাপার মহিলা ব্যতীত অন্য কারো জানা সম্ভব নয়। তবে বাদীর (অভিযোক্তার) একটি কসমের সাথে দু'জন মহিলার সাক্ষীর ভিত্তিতে ফয়সালা করা জায়েয না নাজায়েয, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যেমন, একজন পুরুষ সাক্ষী দিলে এবং দ্বিতীয় সাক্ষীর পরিবর্তে বাদী কসম খেলে ফায়সালা করা জায়েয। হানাফী ফক্বীহদের নিকট এ রকম করা জায়েয নয়। তবে মুহাদ্দিসীনগণ জায়েয হওয়ার কথাই ব্যক্ত করেছেন। কারণ, হাদীসে একজন সাক্ষী এবং কসমের সাথে ফায়সালা করা প্রমাণিত। আর দু'জন মহিলা যখন একজন পুরুষ সাক্ষীর সমান, তখন দু'জন মহিলা এবং কসমের সাথে ফায়সালা করা অবশ্যই জায়েয হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[৪] এখানে একজন পুরুষের মোকাবেলায় দু'জন মহিলার সমান হওয়ার কারণ ও যুক্তি আছে। অর্থাৎ, মহিলা জ্ঞান ও স্মরণশক্তিতে পুরুষের থেকে দুর্বল। (যেমন মুসলিম শরীফের হাদীসে মহিলাকে কম জ্ঞানের অধিকারিণী বলা হয়েছে।) এখানে মহিলাকে ছোট ও তুচ্ছ সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। (যেমন, অনেকে বুঝাতে চেষ্টা করে।) বরং উদ্দেশ্য হল, একটি প্রাকৃতিক দুর্বলতার কথা বর্ণনা করা; যা মহান আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাঁর কৌশলগত ব্যাপারের অন্তর্ভুক্ত। অহংকারবশতঃ কেউ যদি তা স্বীকার না করে, তাহলে তার ব্যাপার ভিন্ন। তবে প্রকৃতার্থে এবং বাস্তবতার দিক দিয়ে এটা অস্বীকারযোগ্য নয়।

[৫] এটা ঋণ আদান-প্রদানের কথা লিখে রাখার উপকারিতা। এ থেকে সুবিচারের দাবীসমূহ পূরণ হবে, সাক্ষীও ঠিক থাকবে (সাক্ষীর মৃত্যুর পর এবং তার অনুপস্থিত থাকাকালীন এই লেখা কাজে আসবে।) এবং সন্দেহ-সংশয় থেকে উভয় পক্ষ হিফাযতে থাকবে। কারণ, সন্দেহের সৃষ্টি হলে লেখা দেখে তা দূর করে নেওয়া যেতে পারে।

[৬] এটা এমন বেচা-কেনা যা ধারে হয় অথবা দাম-দর হয়ে যাওয়ার পরও যাতে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নচেৎ ইতিপূর্বে নগদ বেচা-কেনার কথা লিখে নেওয়ার নির্দেশ থেকে পৃথক করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এই বেচা-কেনা থেকে উদ্দেশ্য হল, জমি-জায়গা, বাড়ি-দোকান, বাগান ও পশু বেচা-কেনা। (আয়সারুত তাফাসীর)

[৭] তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হল, কোন দূর-দূরান্ত অঞ্চলে তাদেরকে ডেকে আনা; যার কারণে তাদের নিজেদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে অথবা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (তাদেরকে রাহাখরচ না দেওয়া) কিংবা তাদেরকে মিথ্যা কথা লিখতে এবং মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা ইত্যাদি।

[৮] অর্থাৎ, যে বিষয়গুলোর প্রতি তাকীদ করা হয়েছে, সেগুলোর উপর আমল কর এবং যে সব জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, তা থেকে বিরত থাকো।