অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে (শত্রুদেরকে) পরাজিত করল এবং দাঊদ জ্বালুতকে কতল করল এবং আল্লাহ দাঊদকে রাজ্য ও হেকমত দান করলেন এবং তাকে শিক্ষা দিলেন যা ইচ্ছে। যদি আল্লাহ মানবজাতির একদলকে অন্যদল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ সর্বজগতের প্রতি কৃপালু।
এসব আল্লাহরই আয়াত, যা আমি সঠিকভাবে তোমাকে পড়িয়ে শুনাচ্ছি এবং নিশ্চয়ই তুমি রসূলদের অন্তর্ভুক্ত।
এ রসূলগণ এরূপ যে, তাদের মধ্যে কাউকে অন্য কারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে, তাদের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাদের কাউকে পদমর্যাদায় উচ্চ করেছেন। আমি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট দলীলসমূহ প্রদান করেছি, রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) দ্বারা সাহায্য করেছি এবং আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন, তাহলে তাদের পরবর্তীরা তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল পৌঁছার পর পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহ করত না, কিন্তু তারা পরস্পর মতভেদ সৃষ্টি করল, তাদের কেউ কেউ ঈমান আনল এবং কেউ কেউ কুফরী করল, আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন, তাহলে তারা যুদ্ধবিগ্রহ করত না, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন, তা-ই করে থাকেন।
হে ঈমানদারগণ! আমার দেয়া জীবিকা থেকে খরচ কর সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ কাজে আসবে না। বস্তুতঃ কাফিরগণই অত্যাচারী।
আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, তাঁরই। কে সেই ব্যক্তি যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করে? তিনি লোকদের সমুদয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবস্থা জানেন। পক্ষান্তরে মানুষ তাঁর জ্ঞানের কোনকিছুই আয়ত্ত করতে সক্ষম নয়, তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছে করেন সেটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবী পরিবেষ্টন করে আছে এবং এ দু’য়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না, তিনি উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান।
দীনের মধ্যে জবরদস্তির অবকাশ নেই, নিশ্চয় হিদায়াত গোমরাহী হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই যে ব্যক্তি মিথ্যে মা’বুদদেরকে (তাগুতকে) অমান্য করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল, নিশ্চয়ই সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করল যা ছিন্ন হওয়ার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাতা।
আল্লাহ মু’মিনদের অভিভাবক, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন এবং কাফিরদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত, সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই আগুনের বাসিন্দা, এরা চিরকাল সেখানে থাকবে।
তুমি কি সেই ব্যক্তির ঘটনা সম্পর্কে চিন্তা কর নি, যে ইবরাহীমের সঙ্গে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে তর্ক করেছিল, যেহেতু আল্লাহ তাকে রাজত্ব দান করেছিলেন। ইবরাহীম তাকে যখন বলল, ‘আমার প্রতিপালক তিনিই, যিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান’। সে বলল, ‘আমিও জীবিত করি এবং মৃত্যু ঘটাই’। ইবরাহীম বলল, ‘আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর’। তখন সেই কাফিরটি হতভম্ব হয়ে গেল। বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদেরকে সুপথ দেখান না।
কিংবা এমন ব্যক্তির ঘটনা সম্পর্কে (তুমি কি চিন্তা করনি) যে এক নগর দিয়ে এমন অবস্থায় যাচ্ছিল যে তা উজাড় অবস্থায় ছিল। সে বলল, ‘আল্লাহ এ নগরীকে এর মৃত্যুর পরে কীভাবে জীবিত করবেন’? তখন আল্লাহ তাকে একশ’ বছর মৃত রাখলেন। তারপর তাকে জীবিত করে তুললেন ও জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এ অবস্থায় কতকাল ছিলে’? সে বলল, ‘একদিন ছিলাম কিংবা একদিন হতেও কম’। আল্লাহ বললেন, ‘বরং তুমি একশ’ বছর ছিলে, এক্ষণে তুমি তোমার খাদ্যের ও পানীয়ের দিকে লক্ষ্য কর, এটা পচে যায়নি। আর গাধাটার দিকে তাকিয়ে দেখ, আর এতে উদ্দেশ্য এই যে, আমি তোমাকে মানুষের জন্য উদাহরণ করব। আবার তুমি হাড়গুলোর দিকে লক্ষ্য কর, আমি কীভাবে ওগুলো জোড়া লাগিয়ে দেই, তারপর গোশত দ্বারা ঢেকে দেই। এরপর যখন তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন সে বলল, ‘এখন আমি পূর্ণ বিশ্বাস করছি যে, আল্লাহ্ই সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’।
যখন ইবরাহীম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি মৃতকে কীরূপে জীবিত করবে আমাকে দেখাও’। আল্লাহ বললেন, ‘তুমি কি বিশ্বাস কর না’? সে আরয করল, ‘নিশ্চয়ই, তবে যাতে আমার অন্তঃকরণ স্বস্তি লাভ করে (এজন্য তা দেখতে চাই)’। আল্লাহ বললেন, তাহলে চারটি পাখী নাও এবং তাদেরকে বশীভূত কর। তারপর ওদের এক এক টুকরো প্রত্যেক পাহাড়ের উপর রেখে দাও, অতঃপর সেগুলোকে ডাক দাও, তোমার নিকট দৌড়ে আসবে। জেনে রেখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।