আর উপস্থাপিত করা হবে ‘আমলনামা, তখন তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে দেখবেন আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবে, ‘হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে [১]।’ আর তারা যা আমল করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে [২]; আর আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না [৩]।
[১] দুনিয়ার বুকে তারা যা যা করেছিল তা সবই লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সে সব লিখিত গ্রন্থগুলো সেখানে তারা দেখতে পাবে। তাদের কারও আমলনামা ডান হাতে আবার কারও বাম হাতে দেয়া হবে। তারা সেখানে এটাও দেখবে যে, সেখানে ছোট-বড়, গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বহীন সবকিছুই লিখে রাখা হয়েছে। অন্যত্র মহান আল্লাহ তাদের আমলনামা সম্পর্কে বলেন; “প্রত্যেক মানুষের কাজ আমি তার গ্ৰীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। ‘তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকেশের জন্য যথেষ্ঠ।” [সূরা আল-ইসরা; ১৩]
[২] অর্থাৎ হাশরবাসীরা তাদের কৃতকর্মকে উপস্থিত পাবে। অন্যান্য আয়াতে আরো স্পষ্ট ভাষায় তা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে; “যে দিন প্রত্যেকে সে যা ভাল কাজ করেছে এবং সে যা মন্দ কাজ করেছে তা বিদ্যমান পাবে, সেদিন সে তার ও ওটার মধ্যে ব্যবধান কামনা করবে। আল্লাহ তার নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করতেছেন। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াদ্র। ” [সূরা আলে-ইমরান; ৩০] আরও বলা হয়েছেঃ “সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কী আগে পাঠিয়েছে ও কী পিছনে রেখে গেছে। ” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৩] আরও বলা হয়েছেঃ “যে দিন গোপন ভেদসমূহ প্রকাশ করা হবে” [সূরা আত-ত্বরেক;৯] মুফাসসিরগণ বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে এর অর্থ সাধারণভাবে এরূপ বর্ণনা করেন যে, এসব কৃতকর্মই প্রতিদান ও শাস্তির রূপ পরিগ্রহ করবে। তাদের আকার-আকৃতি সেখানে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। যেমন, কোন কোন হাদীসে আছে, যারা যাকাত দেয় না, তাদের মাল কবরে একটি বড় সাপের আকার ধারণ করে তাদেরকে দংশন করবে এবং বলবেঃ আমি তোমার সম্পপদ ৷ [বুখারীঃ ১৩৩৮, তিরমিয়ীঃ ১১৯৫] সৎকর্ম সুশ্ৰী মানুষের আকারে কবরের নিঃসঙ্গ অবস্থায় আতঙ্ক দূর করার জন্য আগমন করবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৮৭] মানুষের গোনাহ বোঝার আকারে প্রত্যেকের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হবে। অনুরূপভাবে, কুরআনে ইয়াতিমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-
اِنَّمَا يَاْكُلُوْنَ فِىْ بُطُوْنِحِمْ نَارًا
[সূরা আন-নিসাঃ ১০] অথবা, আয়াতের এ অর্থও করা যায় যে, তারা তাদের কৃতকর্মের বিবরণ সম্বলিত দপ্তর দেখতে পাবে, কোন কিছুই সে আমলনামা লিখায় বাদ পড়েনি। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াত শুনিয়ে বলতেন; তোমরা যদি লক্ষ্য কর তবে দেখতে পাবে যে, লোকেরা ছোট-বড় সবকিছু গণনা হয়েছে বলবে কিন্তু কেউ এটা বলবে না যে, আমার উপর যুলুম করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা ছোট ছোট গুনাহর ব্যাপারে সাবধান হও; কেননা এগুলো একত্রিত হয়ে বিরাট আকার ধারণ করে ধ্বংস করে ছাড়বে। [তাবারী]
[৩] অর্থাৎ এক ব্যক্তি একটি অপরাধ করেনি কিন্তু সেটি খামাখা তার নামে লিখে দেয়া হয়েছে, এমনটি কখনো হবে না। আবার কোন ব্যক্তিকে তার অপরাধের কারণে প্রাপ্য সাজার বেশী দেয়া হবে না এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে অযথা পাকড়াও করেও শাস্তি দেয়া হবে না। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা মানুষদেরকে অথবা বলেছেন। বান্দাদেরকে নগ্ন, অখতনাকৃত এবং কপর্দকশূণ্য অবস্থায় একত্রিত করবেন। তারপর কাছের লোকেরা যেমন শুনবে দূরের লোকেরাও তেমনি শুনতে পাবে এমনভাবে ডেকে কারও উপর জাহান্নামের অধিবাসীদের কোন দাবী অনাদায়ী থাকতে পারবে না। অনুরূপভাবে, জাহান্নামে প্রবেশকারী কারও উপর জান্নাতের অধিবাসীদের কারও দাবীও অনাদায়ী থাকতে পারবে না। এমনকি যদি তা একটি চপেটাঘাতও হয়। বর্ণনাকারী বললেন; কিভাবে তা সম্ভব হবে, অথচ আমরা তখন নগ্ন শরীর, অখতনাকৃত ও রিক্তহস্তে সেখানে আসব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন; নেককাজ ও বদকাজের মাধ্যমে সেটার প্রতিদান দেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদ; ৩/৪৯৫] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘’শিংবিহীন প্রাণী সেদিন শিংওয়ালা প্রাণী থেকে তার উপর কৃত অন্যায়ের কেসাস নিবে। ’ [মুসনাদে আহমাদ; ১/৪৯৪]