আর স্মরণ করুন [১], যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! এ শহরকে নিরাপদ করুন [২] এবং আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে মূর্তি পূজা হতে দূরে রাখুন [৩]।
[১] সাধারণ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করার পর এবার আল্লাহ্ কুরাইশদের প্রতি যেসব বিশেষ অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলোর কথা বলছেন। এ সংগে একথাও বলা হচ্ছে যে, তোমাদের প্রপিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে তোমাদের এখানে আবাদ করেছিলেন, তার দো’আর জবাবে আমি তোমাদের প্রতি কোন ধরনের অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলাম এবং এখন তোমরা নিজেদের প্রপিতার প্রত্যাশা ও নিজেদের রবের অনুগ্রহের জবাবে কোন ধরনের ভ্রষ্টতা ও দুষ্কর্মের অবতারণা করে যাচ্ছো। তিনি তো এ ঘরকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য তৈরী করেছিলেন। এ ইবরাহীম যার জন্য এ এলাকা আবাদ হয়েছে তিনি তো প্রচণ্ডভাবেই আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদাতের বিরোধিতা করে গেছেন। তিনিই তো মক্কার জন্য নিরাপত্তার দো’আ করেছেন। [আল-বাহরুল মুহীত; ইবন কাসীর]
[২] এখানে ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম-এর দু’টি দো’আ উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম দো’আঃ
(رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا)
-অর্থাৎ হে আমার রব! এ (মক্কা) নগরীকে শান্তির আলয় করে দাও। সূরা আল-বাকারায়ও [১২৬ নং আয়াতে] এ দো’আর উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে (بلد) শব্দটি (الف) ও (لام) ব্যতীত (بلدا) বলা হয়েছে। এর অর্থ অনির্দিষ্ট নগরী। এর কারণ হিসেবে কোন কোন মুফাসসির যা বলেন তা এই যে, এ দো’আটি যখন করা হয়েছিল, তখন মক্কা নগরীর পত্তন হয়নি। তাই ব্যাপক অর্থবোধক ভাষায় দো'আ করেছিলেন যে, এ জায়গাকে একটি শান্তির নগরীতে পরিণত করে দিন। এরপর মক্কায় যখন জনবসতি স্থাপিত হয়ে যায়, তখন এ আয়াতে বর্ণিত দো’আটি করেন। কারণ এর পরে তার দু ছেলে ইসমাঈল ও ইসহাকের কথা উল্লেখ করেছেন। যা দ্বারা বোঝা যায় যে, দো’আটি পরেই করা হয়েছে। কারণ ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ইসহাকের চেয়ে তের বছরের বড় ছিলেন। আর প্রথম যখন দো’আ করেছিলেন তখন ইসমাঈল ও তার মা-এ দু’জনই ছিলেন। আর ইসমাঈল তখন ছিলেন দুগ্ধপোষ্য শিশু। [আল-বাহরুল মুহীত; ইবন কাসীর]
কোন কোন মুফাসসির বলেন, সূরা বাকারার আয়াতে সে দেশ ও দেশের বাসিন্দা সবার নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে, পক্ষান্তরে এ সূরায় শুধু দেশের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] এ ক্ষেত্রে মক্কাকে নির্দিষ্ট করে প্রথমে যে দো’আ করেন তা হচ্ছে, ‘একে শান্তির আবাসস্থল করে দিন।’ আল্লাহ্ তা’আলা নবীর এ দো’আ কবুল করেছেন। তিনি অন্যত্র বলেন, “তারা কি দেখে না আমরা ‘হারাম’কে নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ এর চারপাশে যেসব মানুষ আছে, তাদের উপর হামলা করা হয়।” [সূরা আল-আনকাবূত; ৬৭]
এখানে লক্ষণীয় যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সবকিছুর আগে নিরাপত্তার জন্য দো’আ করেছেন। কারণ, যদি কোন স্থানে নিরাপত্তার অভাব হয়, সেখানে দ্বীন- দুনিয়ার কোন কাজই সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয় না। [ফাতহুল কাদীর]
[৩] দ্বিতীয় দো’আ এই যে, আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। নবীগণ নিষ্পাপ। কিন্তু এখানে ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম দো’আ করতে গিয়ে নিজেকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। এর কারণ এই যে, স্বভাবজাত ভীতির প্রভাবে নবীগণ সর্বদা শংকা অনুভব করতেন। অথবা আসল উদ্দেশ্য ছিল সন্তান-সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচানোর দো’আ করা। সন্তানদেরকে এর গুরুত্ব বোঝাবার জন্য নিজেকেও দো’আয় শামিল করে নিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় বন্ধুর দো’আ কবুল করেছেন। ফলে তার সন্তানরা শির্ক ও মূর্তিপূজা থেকে নিরাপদ থাকে। [তাবারী; কুরতুবী] তবে তার বংশধরদের মধ্যে মূর্তিপূজা হবে না এমনটি বলা হয়নি এবং ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালামও এমন দো’আ করেননি। কারণ, মক্কাবাসীরা সাধারণভাবে ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম-এরই বংশধর। তাদের মধ্যে মূর্তিপূজা বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেক দো’আকারীর উচিত তার নিজের ও পিতামাতা ও তার সন্তান-সন্তুতিদের জন্য এ দো’আ করা। [ইবন কাসীর]